মৃত্যু; এক অনিবার্য সত্য মানুষের জীবনে। শুধু কী মানুষের জীবনে? মৃত্যু তো সবারই হয়। হ্যা তা হয় কিন্তু শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বাঁচার আশা আর স্মৃতি ধরে রাখার গুণটি মানুষেরই আয়ত্তে। জহির রায়হান তার স্বল্প পরিসরের গল্পের মধ্যে জীবনের কঠোর সত্যগুলো তুলে ধরেন। তেমনি কয়েকটি মৃত্যু গল্পে মৃত্যুর আশংকায় শঙ্কিত কিছু মানুষের স্বার্থপর চেহারা তুলে ধরেছেন।
গল্পের পটভূমি বুড়োকর্তা আহমেদ আলী শেখের পরিবারকে নিয়ে। চার সন্তান ও নাতি নাতনীদেরকে নিয়ে বুড়োকর্তার সুখী পরিবার। কোন এক আনন্দঘন রাতে বুড়োকর্তার দেখা এক দুঃস্বপ্ন পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে ওলটপালট করে দেয়। স্বপ্নটি সাধারণ কোন স্বপ্ন নয় বরং বুড়োকর্তার বাবা ও ভাইকে হারানোর অতীতের এক কালো সংকেত; পরিবারের কারো মৃত্যুর সংকেত!
পারিবারিক সম্প্রীতির আড়ালে স্বার্থপর চেহারা উন্মোচিত হয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝের দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে! সম্পত্তির নেশায় ভাইয়ে ভাইয়ের সম্পর্কে চিড় ধরে। সম্পর্কের এই পালাবদলে শুধু পালটায় না বাবা-মা এর সন্তানের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা। বুড়োকর্তা ও স্ত্রী জোহরা তখনও প্রার্থনা করে নিজেদের জীবনের বিনিময়ে সন্তানের জীবন বাচানোর!!!
লেখক এই গল্পের ইতি টেনেছেন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নয় বরং সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। বাড়ির পুরাতন চাকর আব্দুলের যমজ বাচ্চার জন্মের মধ্য দিয়ে গল্প শেষ হয়। কিন্তু আসলে এই সৃষ্টি নবজাতকের নয়। এ সৃষ্টি বুড়োকর্তার পরিবারের সবার। মিথ্যে ও ঠুনকো পারিবারিক সম্পর্কের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রকৃত সম্পর্কের সৃষ্টির রূপক এই নবজাতক বলে আমি মনে করি।
প্রিয় উক্তিঃ-
"উত্তেজিত করছি কি আর সাধে! ঘরে ছেলেপেলেগুলো আছে তাদের কথা আমাকে ভাবতে হবেনা? খোদা না করুক আজকে যদি তোমার কিছু একটা হয় তাহলে ওদের নিয়ে আমি দাঁড়াবো কোথায়? "
"আশ্চর্য । আমি মরে গেলে আমার মৃত্যুটা তার কাছে বড় নয়। বড় হল কেমন করে সে খাবে। পড়বে। বাঁচবে।"
--------------- o--------------
0 comments: