বলা হয়ে থাকে হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাসিক নয় বরং অপন্যাসিক। তার লিখায় অর্থহীন ও যৌনতার সুড়সুড়ি ছাড়া শিক্ষামূলক কিছু নেই। সমালোচকদের বাণীর সত্যতা যাচাই আমার সাজে না। হুমায়ূনের ''অর্থহীন'' রচনার ভাবার্থ অনুমান করাই আমার জন্য ধৃষ্টতা তবুও আমি তা করতে ভালোবাসি !
মন্দ্রসপ্তক (সপ্তম সুর), হুমায়ূনের আরেকটি পারিবারিক গল্প। গল্পের শুরুটা হঠাৎ কোন দিনের ঘটনা দিয়ে , হুমায়ূনের অন্য সব রচনার মতই। গল্পের ঘটনা একটি পরিবারকে নিয়ে নয় বরং একজন মানুষ, টুকুর পরিবারকে নিয়ে। গল্পে টুকুর কোন স্বকীয়তা নেই বরং নির্লিপ্ত একজন চরিত্র, অনেকটা হুমায়ুন আহমেদ এর মত যিনি কিনা তার পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।
আমার কাছে মনে হয়েছে গল্পের পরিসর টুকুর ছোট চাচাকে ঘিরে, একজন ব্যর্থ মানুষকে নিয়ে। সফলতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ তার অসুস্থ স্ত্রী এর বদলে তার নার্সকে ভালোবেসে ফেলে এবং তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরিবার ও সমাজ এর সামনে দাড়িয়ে তার এই সিদ্ধান্তের জন্য লড়াই করার ক্ষমতা বা সাহস তার ছিলো না। দিনশেষে টুকুর পরিবারের কোন ক্ষতি না হলেও নার্স সমিতা, ড্রাইভার কুদ্দুস ও ছোট্ট মেয়ে লোরেটা কে মাশুল গুণতে হয়।
এই গল্পের সমান্তরালে চলা আরেকটি পরিবার, টুকুর দূর সম্পর্কের খালার পরিবার। যেখানে বাবা মারা যাওয়ার পর রিমির মা আরেকজন পুরুষকে গ্রহণ করে কিন্তু বাবা মা এর সম্পর্কের তিক্ততার সাক্ষী রিমির কাছে তার মা একজন স্বার্থপর ও সন্দেহবাতিক মহিলা ছাড়া কেউ না যে কীনা তার বাবার মৃত্যুর পরোক্ষ কারণ।
দ্বিতীয় বিয়ে অপরাধের কোন বিষয় না হলেও এই গল্পে মূলত আমাদের সমাজের চলমান স্বার্থপরতা , সম্পর্কের টানাপড়েন বিষয়টি মুখ্য। মীরার অল্পবয়সে বখাটের সাথে প্রেম, রিমির তার মা কে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা অথবা বৈবাহিক অশান্তি থেকে পরকীয়ায় আসক্ত এসবই তিক্তকর পারিবারিক সম্পর্কের মূলসূত্রে বাধা, অপরদিকে হুমায়ূন ভালোবাসার সম্পর্কের স্বার্থহীনতা দেখিয়েছেন টুকু আর লোরেটা এর মাধ্যমে।
"গভীর মমতায় আমার চোখ ছলছল করতে লাগল। এই বাড়িতে কত না দুঃসময় অপেক্ষা করছে তার জন্যে! বড়দের তৈরী করা নাটকে তার অভিনয় করতে হবে। ইচ্ছে না থাকলেও করতে হবে।"
----------o----------
0 comments: